আয়কর ক্যালকুলেটর (২০২৩-২৪)

আপনার বার্ষিক আয় এবং করদাতার ধরণ অনুযায়ী প্রদেয় করের পরিমাণ গণনা করুন।

মোট প্রদেয় কর

১,০৫,০০০.০০৳

আপনার করযোগ্য আয়ের উপর ভিত্তি করে

করমুক্ত আয়ের সীমা

৩,৫০,০০০.০০৳

আপনার নির্বাচিত ধরনের জন্য

করের হিসাব

আয়ের স্তরকরের হারকর (টাকা)
প্রথম ৩,৫০,০০০.০০৳ পর্যন্ত০%০.০০৳
পরবর্তী ১,০০,০০০.০০৳ এর উপর5%৫,০০০.০০৳
পরবর্তী ৩,০০,০০০.০০৳ এর উপর10%৩০,০০০.০০৳
পরবর্তী ৪,০০,০০০.০০৳ এর উপর15%৬০,০০০.০০৳
পরবর্তী ৫০,০০০.০০৳ এর উপর20%১০,০০০.০০৳
মোট কর১,০৫,০০০.০০৳

* ন্যূনতম করের পরিমাণ প্রযোজ্য হতে পারে। এটি একটি আনুমানিক হিসাব।

আয়কর ক্যালকুলেটর কী?

একটি আয়কর ক্যালকুলেটর হলো একটি অনলাইন টুল যা আপনাকে আপনার বার্ষিক আয়ের উপর ভিত্তি করে প্রদেয় করের পরিমাণ গণনা করতে সাহায্য করে। এটি বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক নির্ধারিত সর্বশেষ কর হার এবং নিয়মাবলী অনুসরণ করে কাজ করে। আপনাকে শুধু আপনার মোট বার্ষিক আয় এবং আপনার করদাতার ধরণ (যেমন: পুরুষ, মহিলা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি) ইনপুট করতে হবে, এবং এই টুলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার করযোগ্য আয় এবং চূড়ান্ত প্রদেয় করের পরিমাণ হিসাব করে দেখাবে।

এই টুলটি কী সমস্যার সমাধান করে?

আয়কর গণনা একটি জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে। করের বিভিন্ন স্তর (স্ল্যাব), করমুক্ত আয়ের সীমা, সারচার্জ এবং অন্যান্য নিয়মাবলী বোঝা সাধারণ মানুষের জন্য প্রায়শই কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। অনেকেই করের হিসাব করতে গিয়ে ভুল করেন অথবা একজন পেশাদারের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হন, যা ব্যয়বহুল হতে পারে। করের পরিমাণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বছরের শেষে আর্থিক পরিকল্পনা করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

আমাদের আয়কর ক্যালকুলেটর এই জটিলতাকে সহজ করে দেয়। এটি আপনাকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে আপনার প্রদেয় করের পরিমাণ জানতে সাহায্য করে। আপনাকে করের স্ল্যাব বা নিয়মাবলী মুখস্থ রাখতে হবে না। এই টুলটি ব্যবহার করে আপনি আগে থেকেই আপনার করের দায় সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী আপনার আর্থিক পরিকল্পনা সাজাতে পারেন।

কীভাবে আমাদের আয়কর ক্যালকুলেটর ব্যবহার করবেন?

আমাদের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ:

  1. আপনার বার্ষিক আয় লিখুন: প্রথমে, "আপনার মোট বার্ষিক আয়" ফিল্ডে আপনার বেতন, ব্যবসা এবং অন্যান্য সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত মোট আয় লিখুন।
  2. করদাতার ধরণ নির্বাচন করুন: এরপর, আপনার জন্য প্রযোজ্য করদাতার ধরণটি নির্বাচন করুন (যেমন: পুরুষ, মহিলা/৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা), কারণ করমুক্ত আয়ের সীমা করদাতার ধরণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
  3. ফলাফল দেখুন: আপনি এই তথ্যগুলো ইনপুট করার সাথে সাথেই, ক্যালকুলেটরটি আপনার মোট প্রদেয় করের পরিমাণ গণনা করে দেখাবে।
  4. হিসাব দেখুন (ঐচ্ছিক): আপনি কীভাবে এই করের পরিমাণ গণনা করা হলো তার একটি বিস্তারিত ধাপ-ভিত্তিক ব্যাখ্যাও দেখতে পাবেন, যা আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝতে সাহায্য করবে।

আমাদের আয়কর ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সুবিধা

  • দ্রুত এবং নির্ভুল গণনা: ম্যানুয়াল হিসাবের ভুল এড়িয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার করের পরিমাণ জানুন।
  • সর্বশেষ নিয়মাবলী অনুযায়ী আপডেট: আমাদের ক্যালকুলেটরটি সর্বদা বাংলাদেশের সর্বশেষ আয়কর আইন এবং কর হার অনুযায়ী আপডেট করা হয়।
  • আর্থিক পরিকল্পনায় সহায়ক: আগে থেকেই আপনার করের দায় সম্পর্কে জেনে আপনি আপনার বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়ের পরিকল্পনা আরও ভালোভাবে করতে পারেন।
  • ব্যবহার করা সহজ: কোনো জটিল জ্ঞান ছাড়াই যে কেউ সহজেই এই টুলটি ব্যবহার করতে পারে।
  • সম্পূর্ণ বিনামূল্যে: এই গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি ব্যবহার করার জন্য কোনো খরচ নেই।
  • গোপনীয়তা সুরক্ষিত: আপনার আয়ের তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয় কারণ সমস্ত গণনা আপনার ব্রাউজারেই সম্পন্ন হয়।

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহার

বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্য

একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, যার বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকা, তিনি জানতে চান অর্থবছর শেষে তাকে কত টাকা আয়কর দিতে হবে। তিনি ক্যালকুলেটরে তার আয় ইনপুট করেন এবং করদাতার ধরণ হিসেবে "পুরুষ" নির্বাচন করেন। টুলটি তাকে তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রদেয় করের পরিমাণ এবং কোন স্ল্যাবে কত কর প্রযোজ্য তার একটি বিস্তারিত হিসাব দেখায়। এটি তাকে কর রেয়াতের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।

ফ্রিল্যান্সার এবং পরামর্শকদের জন্য

একজন ফ্রিল্যান্সার, যার আয় প্রতি মাসে পরিবর্তিত হয়, তিনি তার আনুমানিক বার্ষিক আয়ের উপর ভিত্তি করে করের পরিমাণ জানতে চান। তিনি তার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন আয়ের জন্য কর গণনা করে দেখেন, যা তাকে প্রতি মাসে করের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আলাদা করে রাখতে সাহায্য করে, যাতে বছরের শেষে একসাথে বড় অংকের চাপ সৃষ্টি না হয়।

প্রবীণ নাগরিকদের জন্য

একজন ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যিনি তার সঞ্চয়পত্র এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয় করেন, তিনি জানতে চান তার জন্য প্রযোজ্য করমুক্ত আয়ের সীমা কত এবং তাকে কত টাকা কর দিতে হবে। তিনি ক্যালকুলেটরে "মহিলা / ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে" বিকল্পটি নির্বাচন করেন এবং দেখেন যে তিনি সাধারণ করদাতার চেয়ে বেশি করমুক্ত আয়ের সুবিধা পাচ্ছেন।

মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর ব্যাখ্যা

  • বিভিন্ন করদাতার ধরণ: টুলটি সাধারণ ব্যক্তি, মহিলা, ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন করমুক্ত আয়ের সীমা বিবেচনা করে, যা গণনার নির্ভুলতা নিশ্চিত করে।
  • ধাপ-ভিত্তিক হিসাব: এটি শুধুমাত্র চূড়ান্ত ফলাফলই দেখায় না, বরং কোন আয় স্তরের উপর কত শতাংশ হারে কর প্রয়োগ করা হয়েছে তার একটি স্বচ্ছ এবং বোধগম্য ব্যাখ্যাও প্রদান করে।
  • ন্যূনতম কর বিবেচনা: ক্যালকুলেটরটি ন্যূনতম করের নিয়মাবলীও বিবেচনা করে। যদি আপনার আয় একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে, তবে প্রযোজ্য ন্যূনতম করের পরিমাণটি দেখানো হয়।
  • রিয়েল-টাইম গণনা: আপনি আপনার আয়ের পরিমাণ পরিবর্তন করার সাথে সাথেই প্রদেয় করের পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে আপডেট হয়।

সেরা অভ্যাস এবং টিপস

  • করযোগ্য আয় জানুন: আপনার মোট আয় থেকে করমুক্ত আয় (যেমন: প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি) বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় গণনা করা হয়। আমাদের ক্যালকুলেটরটি মোট আয়ের উপর ভিত্তি করে একটি সাধারণ হিসাব প্রদান করে।
  • কর রেয়াত সম্পর্কে জানুন: আপনি সঞ্চয়পত্র, ডিপিএস, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার করের পরিমাণ কমাতে পারেন। এই ক্যালকুলেটরটি আপনাকে আপনার মোট করের দায় সম্পর্কে ধারণা দেবে, যা আপনাকে রেয়াতের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে।
  • সময়মতো রিটার্ন দাখিল করুন: প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার আয়কর রিটার্ন দাখিল করা একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আপনার কর্তব্য।
  • একজন পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন: জটিল আর্থিক পরিস্থিতির জন্য, যেমন একাধিক উৎস থেকে আয় বা ব্যবসায়িক আয়, একজন পেশাদার কর পরামর্শকের সাথে কথা বলা সর্বদা একটি ভালো সিদ্ধান্ত।

কারিগরী বিশ্লেষণ: আয়কর গণনার পদ্ধতি

বাংলাদেশে আয়কর গণনা একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে করা হয়, যার মানে হলো আয়ের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে করের হারও বৃদ্ধি পায়। এই পদ্ধতিটিকে "স্ল্যাব" সিস্টেম বলা হয়।

উদাহরণস্বরূপ (২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিয়ম অনুযায়ী):

  1. করমুক্ত সীমা নির্ধারণ: প্রথমে, করদাতার ধরণ অনুযায়ী করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয় (যেমন: সাধারণ করদাতার জন্য ৩,৫০,০০০ টাকা)।
  2. প্রথম স্ল্যাব: করমুক্ত সীমার উপরের প্রথম ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% হারে কর প্রয়োগ করা হয়।
  3. পরবর্তী স্ল্যাব: তার পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকার উপর ১০% হারে কর প্রয়োগ করা হয়।
  4. ধাপে ধাপে বৃদ্ধি: এভাবে আয়ের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে করের হার ১৫%, ২০% এবং সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

আমাদের ক্যালকুলেটরের অ্যালগরিদম এই স্ল্যাব সিস্টেমটিকে অনুসরণ করে। এটি আপনার মোট আয় থেকে করমুক্ত সীমা বাদ দেয় এবং তারপর অবশিষ্ট আয়ের প্রতিটি অংশের উপর প্রযোজ্য হারে কর গণনা করে সেগুলোকে যোগ করে চূড়ান্ত প্রদেয় করের পরিমাণ নির্ধারণ করে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. এই ক্যালকুলেটরের ফলাফল কি চূড়ান্ত?
এই ক্যালকুলেটরটি একটি অত্যন্ত নির্ভুল আনুমানিক হিসাব প্রদান করে। তবে, চূড়ান্ত করের পরিমাণ আপনার বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত এবং অন্যান্য বিশেষ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
২. সারচার্জ কী এবং এটি কি এখানে অন্তর্ভুক্ত?
সারচার্জ হলো উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের উপর প্রযোজ্য একটি অতিরিক্ত কর। বর্তমানে, আমাদের ক্যালকুলেটরটি সাধারণ করের হিসাব করে এবং সারচার্জ অন্তর্ভুক্ত করে না। যদি আপনার মোট সম্পদের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমার (যেমন: ৪ কোটি টাকা) বেশি হয়, তবে আপনাকে সারচার্জ দিতে হবে।
৩. আমার আয়ের তথ্য কি গোপন থাকবে?
হ্যাঁ, সম্পূর্ণ গোপন থাকবে। সমস্ত গণনা আপনার ডিভাইসের ব্রাউজারেই সম্পন্ন হয় এবং আপনার কোনো তথ্য আমাদের কাছে পাঠানো হয় না।
৪. আমি কি গত বছরের কর গণনা করতে পারি?
এই ক্যালকুলেটরটি সর্বদা সর্বশেষ অর্থবছরের নিয়মাবলী ব্যবহার করে আপডেট করা হয়। এটি পুরোনো বছরের কর গণনার জন্য ডিজাইন করা হয়নি।
৫. ন্যূনতম করের পরিমাণ কত?
ন্যূনতম করের পরিমাণ আপনার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য এটি ৫,০০০ টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৪,০০০ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩,০০০ টাকা। যদি আপনার প্রদেয় করের পরিমাণ এর চেয়ে কম হয়, তবে আপনাকে ন্যূনতম কর প্রদান করতে হবে।